বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা ও শর্তাবলী কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল এবং অন্যান্য শর্তাবলী দেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ করে। এখানে আমরা দেশের প্রধান কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতার বিষয়গুলো আলোচনা করব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়:
এইচএসসি/সমমানের ফলাফল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সাধারণত বিজ্ঞান, মানবিক, এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের পৃথকভাবে জিপিএ নির্ধারিত থাকে। সাধারণত শিক্ষার্থীদের মোট জিপিএ (এসএসসি এবং এইচএসসি মিলে) নির্ধারিত ৮.০০ বা তার বেশি থাকতে হয়।
বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা: কিছু নির্দিষ্ট ইউনিটের জন্য (যেমন, ক ইউনিট) গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ইত্যাদি বিষয়গুলোতে ভাল ফলাফল থাকতে হয়।
ভর্তি পরীক্ষার ধরন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত এমসিকিউ এবং লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতাও অন্যদের মতো ভিন্ন ভিন্ন ইউনিটের জন্য ভিন্ন হয়ে থাকে।
এইচএসসি/সমমানের ফলাফল: সাধারণত, মোট জিপিএ ৭.০০ থাকতে হয়। বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানে ভাল ফলাফল থাকতে হয়।
ইউনিট অনুযায়ী শর্ত: বি ইউনিটে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। আর বিজ্ঞান বিভাগের জন্য এ ইউনিট নির্ধারিত।
পরীক্ষার ধরন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত এমসিকিউ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ নিয়ম আছে:
জিপিএ শর্ত: এসএসসি এবং এইচএসসিতে মোট জিপিএ ৮.০০ থাকতে হয়। তবে বিশেষ ইউনিটের জন্য এটি কিছুটা কম হতে পারে।
ইউনিট অনুযায়ী শর্তাবলী: এ ইউনিট সাধারণত বিজ্ঞান বিভাগের জন্য, বি ইউনিট মানবিক বিভাগের জন্য।
পরীক্ষার পদ্ধতি: এখানে ভর্তি পরীক্ষা লিখিত আকারে হয়ে থাকে, যেখানে সাধারণ জ্ঞান, ইংরেজি এবং বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন থাকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কিছু সাধারণ যোগ্যতা:
এইচএসসি ফলাফল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের জিপিএ ৭.০০ থাকতে হয়।
ইউনিটভিত্তিক শর্ত: এখানে প্রতিটি ইউনিটের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শর্ত থাকে, তবে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য ক ইউনিট গুরুত্বপূর্ণ।
পরীক্ষার ধরণ: এমসিকিউ এবং লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়।
বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এখানে ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
শিক্ষাগত যোগ্যতা: বুয়েটে ভর্তির জন্য এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় প্রতিটি পরীক্ষায় ন্যূনতম GPA 4.00 (5.00 এর মধ্যে) থাকা বাধ্যতামূলক।
বিষয়ভিত্তিক শর্ত: শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়নে উচ্চ মানের ফলাফল থাকতে হবে।
পরীক্ষার ধরণ: ভর্তি পরীক্ষা সাধারণত লিখিত পদ্ধতিতে হয় এবং বিষয়ভিত্তিক সমস্যা সমাধান পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যাচাই করা হয়।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এতে ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা কিছুটা ভিন্ন:
শিক্ষাগত যোগ্যতা: গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৭.০০ থাকতে হবে। তবে বিজ্ঞান, মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগভিত্তিক কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে।
ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি: গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়, যেখানে সাধারণ জ্ঞান, ইংরেজি এবং বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন থাকে।
আরও বিস্তারিত জানুন এখানে।
কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত থাকে:
জিপিএ শর্ত: সাধারণত এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৭.০০ থাকা প্রয়োজন। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কৃষি বিষয়ক কিছু জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
পরীক্ষার ধরন: এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়, যেখানে জীববিজ্ঞান, রসায়ন, কৃষি বিষয়ক প্রশ্ন থাকে।
ইঞ্জিনিয়ারিং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা
ইঞ্জিনিয়ারিং গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার শর্তাবলী:
জিপিএ শর্ত: ইঞ্জিনিয়ারিং গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের মোট জিপিএ ৮.০০ থাকতে হয়।
পরীক্ষার ধরণ: ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে শিক্ষার্থীদের এমসিকিউ ভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, যেখানে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়ন বিষয়ক প্রশ্ন থাকে।
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা
বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক:
জিপিএ শর্ত: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৯.০০ জিপিএ থাকতে হয়। তবে মেডিকেল সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে ভালো ফলাফল থাকতে হবে।
বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা: বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞান, রসায়ন এবং পদার্থবিদ্যায় ভালো ফলাফল থাকতে হয়।
পরীক্ষার পদ্ধতি: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সাধারণত এমসিকিউ পদ্ধতিতে নেওয়া হয় এবং বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান যাচাই করা হয়।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং নির্দিষ্ট শর্তাবলী মেনে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।