বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে জেনে নিতে হয় প্রয়োজনীয় যোগ্যতার শর্তাবলী। ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে কী কী পয়েন্ট লাগবে, তা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হলো। এর সাথে সাথে বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কেও বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হবে।
মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার জন্য প্রয়োজনীয় পয়েন্ট
মানবিক শাখার শিক্ষার্থীরা সাধারণত চতুর্থ বিষয়সহ একটি নির্দিষ্ট জিপিএ প্রয়োজন হয়। তবে ভর্তির যোগ্যতা শুধু জিপিএতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিষয়ে ন্যূনতম নম্বরও থাকতে পারে। যেমন, কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় বা ইংরেজিতে ন্যূনতম গ্রেড থাকতে হয়। নিচে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় পয়েন্ট এবং বিষয় সংক্রান্ত শর্তের তালিকা দেওয়া হলো।
ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য সাধারণত চতুর্থ বিষয়সহ একটি নির্দিষ্ট জিপিএ প্রয়োজন হয়। ভর্তির ক্ষেত্রে, এই শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়িক বিষয় যেমন হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স বা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। এছাড়াও ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের কিছু বিষয়ভিত্তিক নম্বর থাকতে হবে। এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা দেওয়া হলো।
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য জিপিএ প্রয়োজনীয়তা তুলনামূলক বেশি থাকে। বিজ্ঞান শাখার ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও জীববিজ্ঞান নিয়ে পরীক্ষা হয়। ভর্তির জন্য বিজ্ঞান শাখায় নির্দিষ্ট কিছু বিষয় যেমন পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নে ভালো গ্রেড থাকা জরুরি। এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শাখার জন্য পয়েন্টের তালিকা দেওয়া হলো।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পয়েন্ট:
- মানবিক শাখা: ন্যূনতম ৬.৫০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। তবে, ইংরেজিতে ন্যূনতম 'B' গ্রেড থাকতে হবে।
- ব্যবসায় শাখা: ন্যূনতম ৬.৭৫ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। এখানে ফিন্যান্স ও অ্যাকাউন্টিংয়ে ন্যূনতম 'C' গ্রেড থাকতে হবে।
- বিজ্ঞান শাখা: ন্যূনতম ৭.০০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে ন্যূনতম নম্বর পেতে হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়:
- মানবিক শাখা: ন্যূনতম ৬.৫০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। এখানে বাংলা এবং ইংরেজিতে ন্যূনতম ৩.৫০ পয়েন্ট থাকতে হবে।
- ব্যবসায় শাখা: ন্যূনতম ৭.০০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। ভর্তি পরীক্ষায় অর্থনীতি ও হিসাববিজ্ঞানের উপর বেশি গুরুত্ব থাকবে।
- বিজ্ঞান শাখা: ন্যূনতম ৭.০০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে ভালো নম্বর থাকা প্রয়োজন।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়:
- মানবিক শাখা: ন্যূনতম ৬.৫০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে বিশেষ করে ভালো গ্রেড থাকা প্রয়োজন।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়:
- মানবিক শাখা: ন্যূনতম ৬.০০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা ও সাধারণ জ্ঞানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
- ব্যবসায় শাখা: ন্যূনতম ৬.৫০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক বিষয়গুলোতে ভালো ফলাফল থাকা জরুরি।
- বিজ্ঞান শাখা: ন্যূনতম ৬.৫০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। বিশেষ করে রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান বিষয়ে ভালো ফলাফল থাকতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব থাকবে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়:
- মানবিক শাখা: ন্যূনতম ৬.৫০ জিপিএ (চতুর্থ বিষয় বাদে)। বিষয়ভিত্তিক জিপিএ ছাড়াও এইচএসসিতে বাংলা ও ইংরেজিতে ন্যূনতম 'C' থাকতে হবে।
- ব্যবসায় শাখা: ন্যূনতম ৬.৫০ জিপিএ (চতুর্থ বিষয় বাদে)। এখানে এইচএসসিতে ইংরেজি ও হিসাববিজ্ঞানে 'C' গ্রেড থাকতে হবে।
- বিজ্ঞান শাখা: ন্যূনতম ৬.৫০ জিপিএ (চতুর্থ বিষয় বাদে)। রসায়ন এবং গণিতে ন্যূনতম 'B' গ্রেড থাকতে হবে। এছাড়াও গণিত এবং ইংরেজিতেও ভালো নম্বর থাকতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়:
- মানবিক শাখা: ন্যূনতম ৬.৫০ জিপিএ (চতুর্থ বিষয় বাদে)। তবে, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়গুলোতে ন্যূনতম নির্দিষ্ট নম্বর পেতে হবে।
- ব্যবসায় শাখা: ন্যূনতম ৬.৫০ জিপিএ (চতুর্থ বিষয় বাদে)। ফিন্যান্স এবং ম্যানেজমেন্টের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া আবশ্যক।
- বিজ্ঞান শাখা: ন্যূনতম ৭.০০ জিপিএ (চতুর্থ বিষয় বাদে)। পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে ভালো ফলাফল থাকতে হবে। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ পরীক্ষা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়:
- মানবিক শাখা: ন্যূনতম ৬.০০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। এখানে মানবিক শাখার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষার আলাদা আলাদা কোটা থাকে।
ব্যবসায় শাখা: ন্যূনতম ৭.০০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। তবে এখানে এইচএসসির ইংরেজি এবং হিসাববিজ্ঞান বিষয়গুলোতে ভালো ফলাফল করতে হবে।
বিজ্ঞান শাখা: ন্যূনতম ৬.৫০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, এবং জীববিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে এখানে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়:
- মানবিক শাখা: ন্যূনতম ৭.৫ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। তবে ভর্তির জন্য এসএসসি এবং এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় বাংলায় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে ভালো ফলাফল করতে হবে।
- ব্যবসায় শাখা: ন্যূনতম ৮.০০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান এবং ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দিয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
- বিজ্ঞান শাখা: ন্যূনতম ৮.৫০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। এখানে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিতের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং গণিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর থাকতে হবে।
চারুকলা শাখার জন্য প্রয়োজনীয় পয়েন্ট
চারুকলা শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য সাধারণত অন্যান্য শাখার মতো জিপিএ লাগলেও, এখানে শিক্ষার্থীদের চারুকলা বিষয়ক দক্ষতাও যাচাই করা হয়। এছাড়া ভর্তির জন্য ড্রয়িং ও ক্রিয়েটিভ আর্টস সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পরীক্ষা নেওয়া হয়। নিচে চারুকলা শাখার জন্য প্রয়োজনীয় পয়েন্ট উল্লেখ করা হলো:
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পয়েন্ট:
চারুকলা শাখা: ন্যূনতম ৬.৫০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। চারুকলা বিষয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়।
- কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়:
চারুকলা শাখা: ন্যূনতম ৬.৫০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। চারুকলা শাখায় ভর্তি হতে হলে প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া দরকার এবং এরপর ড্রয়িং পরীক্ষা দিতে হয়।
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়:
চারুকলা শাখা: ন্যূনতম ৬.৫০ জিপিএ চতুর্থ বিষয়সহ। চারুকলা বিষয়ে যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য দক্ষতা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ আবশ্যক।
ব্যবসায়, বিজ্ঞান এবং মানবিক শাখার ভর্তির সার্বিক যোগ্যতা
ভর্তির ক্ষেত্রে পয়েন্টের পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত যোগ্যতা নির্ধারণ করতে কয়েকটি বিষয়ে নির্দিষ্ট গ্রেড প্রয়োজন হতে পারে। যেমন ব্যবসায়, বিজ্ঞান এবং মানবিক শাখার জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাগত দক্ষতা এবং নির্দিষ্ট বিষয়ে ভালো ফলাফল দরকার হয়।
২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিভিন্ন শাখার প্রয়োজনীয় পয়েন্ট উল্লেখ করা হলো। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য ন্যূনতম জিপিএ-র পাশাপাশি, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলীও উল্লেখিত হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির পাশাপাশি সার্বিক যোগ্যতা অর্জনের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া উচিত।