জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম এবং প্রসিদ্ধ এফেলিয়েট বিশ্ববিদ্যালয় যা ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি গাজীপুর জেলার বোর্ডবাজারে অবস্থিত এবং প্রায় ১১.৩৯ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। ছাত্রছাত্রীর তালিকাভুক্তির দিক থেকে এটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত ২,৪৯৯ টি কলেজে মোট ২৮ লক্ষেরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। এর মধ্যে ৮৫৭ টি কলেজে স্নাতক সম্মান, ডিগ্রি এবং মাস্টার্স পর্যায়ের কোর্স পরিচালিত হয়।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলোতে স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষে ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি প্রক্রিয়া, আবেদন পদ্ধতি, সময়সীমা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি ঘোষণা করা হয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ২০২৪-২৫
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে কোন প্রকার ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে না। শুধুমাত্র এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রণয়ন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
ভর্তি আবেদন শুরুর তারিখ এবং শেষ তারিখ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া ২০২৪ সালের ২২ নভেম্বর থেকে শুরু হবে এবং এটি চলবে ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত। (সম্ভাব্য) শিক্ষার্থীদের অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ করে নির্ধারিত ফি প্রদান করে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
ভর্তি যোগ্যতা
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিভিন্ন শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে।
- মানবিক বিভাগ: আবেদনকারীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সম্মিলিত জিপিএ কমপক্ষে ৬.৫ থাকতে হবে। উভয় পরীক্ষায় আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ ৩.০ থাকতে হবে।
- বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ: এই বিভাগে আবেদনকারীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সম্মিলিত জিপিএ কমপক্ষে ৭.০ থাকতে হবে। উভয় পরীক্ষায় পৃথকভাবে ন্যূনতম জিপিএ ৩.০ প্রয়োজন।
আবেদন ফি ও ফি জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া
প্রাথমিক আবেদন ফি হিসেবে ৩৫০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে যা আবেদনকারীদের নির্ধারিত মোবাইল ব্যাংকিং বা সংশ্লিষ্ট কলেজে জমা দিতে হবে।
অনার্স ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া ২০২৪-২৫
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলোতে অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া অনলাইনে পরিচালিত হবে। যারা আবেদন করতে ইচ্ছুক তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিবিষয়ক ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে পারবেন। অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য প্রাথমিক আবেদন ফি জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
আবেদন পদ্ধতি
- অনলাইন ফর্ম পূরণ: আবেদনকারীকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে লগইন করে অনলাইন ফরম পূরণ করতে হবে।
- পছন্দের কলেজ নির্বাচন: আবেদনকারীরা আবেদন করার সময় সর্বমোট ৫টি কলেজ নির্বাচন করতে পারবেন।
- ফি পরিশোধ: আবেদন ফরম পূরণের পর প্রাথমিক আবেদন ফি জমা দিতে হবে। এই ফি মোবাইল ব্যাংকিং, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, অথবা ব্যাংক ব্রাঞ্চের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে।
- ফর্মের প্রিন্ট কপি সংগ্রহ: আবেদন জমা দেওয়ার পর প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করে রাখতে হবে যা পরবর্তী সময়ে কাজে আসবে।
ভর্তির মেধাতালিকা এবং রিলিজ স্লিপ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ভর্তিতে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয় ধাপে ধাপে। শিক্ষার্থীদের প্রথম মেধাতালিকায় স্থান না পেলে, তারা পরবর্তী মেধাতালিকা এবং রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন।
- ১ম মেধাতালিকা: প্রথম মেধাতালিকায় আবেদনকারীদের সর্বোচ্চ প্রাপ্ত জিপিএ অনুসারে তালিকা প্রকাশ করা হয়।
- ২য় মেধাতালিকা: প্রথম মেধাতালিকায় যেসব শিক্ষার্থীরা স্থান পাননি, তাদের জন্য দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়।
- রিলিজ স্লিপ: প্রথম ও দ্বিতীয় মেধাতালিকায় যারা স্থান পাননি তাদের জন্য রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ প্রদান করা হয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) ভর্তি ফি এবং অন্যান্য ফি
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলোতে স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষে ভর্তি হতে গেলে শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। এছাড়া ভর্তি বাতিল করতে চাইলে ২০০ টাকা এবং পুনঃভর্তি ফি ২০০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
অনার্স ১ম বর্ষ ভর্তির সময়সূচী
- অনলাইন আবেদন শুরুর তারিখ: ২২ নভেম্বর ২০২৪ (সম্ভাব্য)
- অনলাইন আবেদন শেষ তারিখ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ (সম্ভাব্য)
- ক্লাস শুরু: ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর নির্ধারিত সময়ে ক্লাস শুরু হবে।
ভর্তির যোগ্যতা এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের নিম্নলিখিত ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে:
- এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার নম্বরপত্র ও সনদপত্রের ফটোকপি।
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফরমের প্রিন্ট কপি।
- কলেজ কর্তৃক নির্ধারিত আবেদন ফি’র রসিদ।
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি (২ কপি)।
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়)।
কেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত বিভিন্ন কলেজে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ের কোর্সে ভর্তি হওয়ার কিছু সুবিধা রয়েছে যা ছাত্রছাত্রীদের ক্যারিয়ার গঠনে সহায়তা করে।
- বিস্তৃত সুযোগ: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলায় কলেজ রয়েছে।
- ব্যয়বহুল নয়: তুলনামূলকভাবে কম খরচে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করা যায়।
- অধুনিক কোর্স কারিকুলাম: শিক্ষাবর্ষ এবং বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আপডেটেড সিলেবাস প্রদান করা হয়।
- অফিসিয়াল সমর্থন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট স্বীকৃত এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি চাকুরিতে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
প্রশ্ন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কোন কোন কলেজে স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রাম রয়েছে?
উত্তর: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রায় ৮৫৭ টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রাম রয়েছে।
প্রশ্ন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কতদিন সময় লাগে?
উত্তর: সাধারণত ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরবর্তী ২-৩ মাসের মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
প্রশ্ন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কি কোন ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়?
উত্তর: না, ভর্তি পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রস্তুত করা হয়।
উপসংহার
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। উপযুক্ত যোগ্যতা অর্জনকারীরা দ্রুত আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের কাঙ্ক্ষিত কলেজে ভর্তি হতে পারবেন।