ছাত্র ছাত্রী সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখে থাকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য। বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তথা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আয়তনের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় । কিন্তু বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীরা এটা জানেই না যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের বেশিরভাগ কলেজ গুলোর অভিভাবক।বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা University Grant Commission (UGC) এর অধিভুক্ত একটি সম্পূর্ণ সরকারি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশের অনেক গুলো কলেজ রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কলেজ আছে যেগুলো পুরোনো এবং বিখ্যাত। পড়ালেখার পরিবেশ, শিক্ষব্যাবস্থা, ইতিহাস, ছাত্র ছাত্রী এবং শিক্ষক সংখ্যা অনেক বেশি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা কলেজ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবশেষে ২০১৮ সালের সেরা কলেজ র্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এই তালিকায় দেশের ৮৮১ টি কলেজ স্নাতক (অর্নাস) কোর্স করানো কলেজের মধ্যে সারা দেশ থেকে ২৯১টি কলেজ আবেদন করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপক্ষ আবেদন যাচাই-বাছাই করে ১২৫টি কলেজ প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে।
জাতীয় পর্যায়ে সেরা পাঁচ কলেজ
- রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী।
- সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা।
- সরকারি আজিজলু হক কলেজ, বগুড়া।
- আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ।
- কারমাইকেল কলেজ, রংপুর।
- জাতীয় পর্যায়ে সেরা মহিলা কলেজ নির্বাচিত হয়েছে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, ঢাকা।
- জাতীয় পর্যায়ে সেরা বেসরকারি কলেজ ঢাকা কমার্স কলেজ, ঢাকা।
অঞ্চল ভিত্তিক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা কলেজ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের ৮৮১ টি কলেজে স্নাতক (অর্নাস) পড়ায়। ২৯১ টি আবেদনে কৃত কলেজের মধ্যে ১২৫ টি কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেপিআই পরিপূর্ণ করে। এগুলোর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কলেজ গুলোকে ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, রংপুর অঞ্চলে ভাগ করেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপক্ষ অধীনস্থ সেরা কলেজ গুলোকে অঞ্চল ভিত্তিক করে ঢাকা অঞ্চলে ১০ টি সেরা কলেজ, ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৮ টি সেরা কলেজ, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১০ টি করে সেরা কলেজ, সিলেট অঞ্চলে ৬ টি এবং বরিশাল অঞ্চলে ৪ টি সহ মোট বাছাইকৃত ১২৫ টি কলেজ থেকে ৭৬ টি কলেজকে সেরা কলেজ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
ঢাকা অঞ্চলের সেরা কলেজগুলো
- ঢাকা কমার্স কলেজ, ঢাকা।
- তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা।
- লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, ঢাকা।
- সরকারি সা’দত কলেজ, টাঙ্গাইল।
- সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, ঢাকা ।
- সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ, ঢাকা।
- সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর।
- সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ ।
- আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা; হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ, ঢাকা।
- হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ, ঢাকা।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের সেরা কলেজ
- আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ।
- নেত্রকোনা সরকারি কলেজ, নেত্রকোনা।
- জাহানারা লতিফ মহিলা কলেজ, জামালপুর।
- গৌরীপুর মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ।
- শেরপুর মহিলা কলেজ, শেরপুর।
- ইসলামপুর কলেজ, জামালপুর।
- সরকারি মোমিনুন্নেছা মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ।
- সরকারি শহীদ স্মৃতি কলেজ, ময়মনসিংহ।
রংপুর অঞ্চলের সেরা কলেজ
- দিনাজপুর সরকারি কলেজ, দিনাজপুর;
- কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, কুড়িগ্রাম ।
- সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ, রংপুর
- গাইবান্ধা সরকারি কলেজ, গাইবান্ধা।
- আদর্শ কলেজ, দিনাজপুর।
- হাতীবান্ধা আলীমুদ্দিন কলেজ, লালমনিরহাট।
- নীলফামারী সরকারি কলেজ, নীলফামারী।
- কারমাইকেল কলেজ, রংপুর।
- রংপুর সরকারি কলেজ, রংপুর।
- উত্তরবাংলা কলেজ, লালমনিরহাট।
রাজশাহী অঞ্চলের সেরা কলেজ
- রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী।
- সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ, বগুড়া।
- সৈয়দ আহমদ কলেজ, বগুড়া।
- নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ, রাজশাহী।
- নবাব সিরাজ–উদ্–দৌলা (এনএস) সরকারি কলেজ, নাটোর।
- নওগাঁ সরকারি কলেজ, নওগাঁ।
- সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা।
- সরকারি আজিজলু হক কলেজ, বগুড়া।
- সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ, সিরাজগঞ্জ।
- নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
খুলনা অঞ্চলের সেরা কলেজ
- সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজ, খুলনা।
- সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ, যশোর।
- যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, যশোর।
- কুমিরা মহিলা ডিগ্রি কলেজ, সাতক্ষীরা।
- ঝাউডাঙ্গা কলেজ, সাতক্ষীরা।
- কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, কুষ্টিয়া।
- সীমান্ত আদর্শ কলেজ, সাতক্ষীরা।
- খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ, খুলনা
- এম এস জোহা ডিগ্রি কলেজ, চুয়াডাঙ্গা।
- চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ, চুয়াডাঙ্গা।
বরিশাল অঞ্চলের সেরা কলেজ
- সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ, বরিশাল।
- সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, বরিশাল।
- ভোলা সরকারি কলেজ, ভোলা।
- পটুয়াখালী সরকারি কলেজ, পটুয়াখালী।
সিলেট অঞ্চলের সেরা কলেজ
- মুরারিচাঁদ কলেজ (এমসি), সিলেট।
- সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ, সিলেট।
- সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ, সুনামগঞ্জ।
- মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, মৌলভীবাজার।
- মঈনুদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজ, সিলেট।
- সিলেট দক্ষিণ সুরমা কলেজ, সিলেট।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেরা কলেজ
- সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা।
- চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম।
- নোয়াখালী সরকারি কলেজ, নোয়াখালী।
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
- সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম।
- ফেনী সরকারি কলেজ, ফেনী।
- সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম।
- মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ, কুমিল্লা।
- চাঁদপুর সরকারি কলেজ, চাঁদপুর।
- চট্টগ্রাম সরকারি উইমেন্স কলেজ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস
প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার পিছনে নির্দিষ্ট একটি ইতিহাস রয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতার পূর্বে সেই প্রতিষ্ঠানের কিছু উদ্দেশ্যে রয়েছে। ঠিক তেমনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার পিছনেও রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস। ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। কলেজগুলোর সমন্বয় ও শিক্ষা ব্যবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাওয়ার জন্য হঠাৎ করে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করে এবং ১৯৯২ সালের ২১শে অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন করে প্রতিষ্ঠা পায় ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যায় দেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক থেকে এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম অঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজগুলোর চাপ কমানোর জন্য এবং এদের একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর সমন্বয় করে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য গাজিপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় ১১.৩৯ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। দেশের উচ্চশিক্ষার পেছনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অপরিসীম। বর্তমানে ২২৮৩ টি অধিভুক্ত কলেজে ২৮ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা কলেজ হওয়ার মান-দন্ড
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন যেমন কিউ.এস র্যাকিং এর বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রস্তুত করে থাকে নিয়মিত বিভিন্ন কেপিআই অনুসরণ করে ঠিক তেমনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও তার অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজগুলোর একটি মান দন্ড বা তালিকা প্রকাশ করে থাকে। যাকে আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ র্যাকিং বলে থাকি।কার্য সম্পাদন সূচক, যেমন-একাডেমিক কার্যক্রম, কলেজ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো, পঠন-পাঠনে শিক্ষার্থী উপস্থিতিসহ এরকম ৩১ টি কেপিআই এর ভিত্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সেরা কলেজ তালিকা প্রকাশ করে থাকে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত স্নাতক পর্যায়ে দুই ধরনের ডিগ্রি দেয়া হয়। একটি হলো স্নাতক (অর্নাস) যা বাংলাদেশের অনান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চার বছর মেয়াদি এবং এটায় বেশিরভাগ বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস ফলো করে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। অন্যটি হলো ডিগ্রি পাস কোর্স যা তিন বছর মেয়াদি। এটি অনার্স এর মতো বিষয়ভিত্তিক না। এখানে উচ্চমাধ্যমিকের মতো বিভাগ ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ডিগ্রিতে বিবিএ,বিএ,বিএসসি, বিএসএস এই চারটি বিষয়ে ডিগ্রি পাস কোর্স পড়ানো হয়। স্নাতক (অর্নাস) এর ক্ষেত্রে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে দেশের বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিষয়ভিত্তিক চার বছর মেয়াদি অনার্স করানো হয়।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহৎতম একটি প্রতিষ্ঠানের নাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এর অবদান অপরিসীম। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স ও ডিগ্রি পাস কোর্সে ভর্তি হয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে সমাজের জন্য কাজ করে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় নাম হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।