ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ২০২৫-২০২৬: আবেদন, যোগ্যতা, মানবণ্টন ও প্রস্তুতি | DU Admission

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ২০২৫-২০২৬: আবেদন, যোগ্যতা, মানবণ্টন ও প্রস্তুতি

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন থাকে সবার উপরে। দেশের সেরা মেধাবীদের সাথে জ্ঞানার্জন এবং নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ করে দেয় এই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। ভর্তি পরীক্ষা মানেই একটি তুমুল প্রতিযোগিতা, যেখানে সঠিক তথ্য ও গোছানো প্রস্তুতিই হতে পারে আপনার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

Dhaka University Admission Circular 2026 - ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণের এই যাত্রাকে আরও সহজ করতে আমাদের এই বিশেষ আয়োজন। এই আর্টিকেলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া, ন্যূনতম যোগ্যতা, ইউনিট পরিচিতি, আসন সংখ্যা, পরীক্ষার মানবণ্টন, মেধাস্কোর তৈরির প্রক্রিয়া এবং প্রতিটি ইউনিটের জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ভর্তি পরীক্ষার খুঁটিনাটি সকল বিষয় সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখতে সহায়তা করবে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ২০২৫-২০২৬ এর আদ্যোপান্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ২০২৫-২০২৬: আবেদন, যোগ্যতা, মানবণ্টন ও প্রস্তুতি (A to Z গাইডলাইন)


১. ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ তারিখ

যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রথম ধাপ হলো এর গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলো সম্পর্কে অবগত থাকা। সামান্য ভুল বা দেরির কারণে আপনার পুরো বছরের প্রস্তুতি বৃথা যেতে পারে। তাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ২০২৫-২০২৬ এর আবেদন থেকে শুরু করে পরীক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি তারিখ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মনে রাখতে হবে। ভর্তি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এ বছরের জন্য সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। নিচে একটি টেবিলের মাধ্যমে সকল গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ও তথ্য তুলে ধরা হলো, যাতে আপনি সহজেই নিজের পরিকল্পনা সাজাতে পারেন। 

DU Admission Notice 2026 এই অংশে আমরা আবেদনের শুরু এবং শেষের তারিখ, প্রতিটি ইউনিটের পরীক্ষার তারিখ ও সময়সূচি এবং আবেদন ফি সংক্রান্ত তথ্যগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। মনে রাখবেন, নির্ধারিত সময়ের পর আবেদনের কোনো সুযোগ থাকবে না এবং প্রতিটি ইউনিটের পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা দিন ও সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই আপনার পছন্দের ইউনিটের পরীক্ষার তারিখ ভালোভাবে দেখে প্রস্তুতি শুরু করুন। চারুকলা ইউনিটের পরীক্ষা অন্য সকল ইউনিট থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে এবং ভিন্ন তারিখে অনুষ্ঠিত হবে, যা শুধুমাত্র ঢাকাতেই কেন্দ্র করে আয়োজন করা হবে। অন্যান্য ইউনিটের পরীক্ষা ঢাকা সহ দেশের প্রধান বিভাগীয় শহরগুলোতে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে।

গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ও তথ্যাবলি (২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষ)

বিবরণ

তারিখ ও সময়

আবেদন শুরুর তারিখ

২৯ অক্টোবর (দুপুর ১২:০০ টা)

আবেদন শেষের তারিখ

১৬ নভেম্বর ২০২৫ (রাত ১১:৫৯ মিনিট)

আবেদন ফি

কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান, এবং ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট: ১,০৫০ টাকা

চারুকলা ইউনিট: ১,২৫০ টাকা

আইবিএ ইউনিটঃ ১৫০০ টাকা

ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা

০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার (সকাল ১১:০০ টা থেকে ১২:৩০ মিনিট)

চারুকলা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা (সাধারণ জ্ঞান ও অঙ্কন)

২৯ নভেম্বর ২০২৫, শনিবার (সকাল ১১:০০ টা থেকে ১২:৩০ মিনিট)

কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা

১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার (সকাল ১১:০০ টা থেকে ১২:৩০ মিনিট)

বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা


২০ ডিসেম্বর ২০২৬, শনিবার (সকাল ১১:০০ টা থেকে ১২:৩০ মিনিট)

আইবিএ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা


২৮ নভেম্বর ২০২৬, শুক্রবার (সকাল ১১:০০ টা থেকে ১২:৩০ মিনিট)

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

  • আবেদন ফি অনলাইন (ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং) অথবা রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী) এর মাধ্যমে জমা দেওয়া যাবে।

  • চারুকলা ইউনিট ব্যতীত অন্য সকল ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সহ দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর, বরিশাল ও ময়মনসিংহ) অনুষ্ঠিত হবে।

২. আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা: কোন ইউনিটে কারা আবেদন করতে পারবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের পূর্বে আপনাকে অবশ্যই প্রতিটি ইউনিটের জন্য নির্ধারিত ন্যূনতম যোগ্যতা পূরণ করতে হবে। যোগ্যতা পূরণ না হলে আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে। সাধারণত, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল, পাসের সন এবং নির্দিষ্ট বিষয়ে ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে এই যোগ্যতা নির্ধারিত হয়। ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য সাধারণ যোগ্যতা হলো, শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমান এবং ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে মাধ্যমিক বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

প্রতিটি ইউনিটের জন্য আলাদা আলাদা যোগ্যতার শর্ত রয়েছে। যেমন, বিজ্ঞান ইউনিটে আবেদনের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আসতে হবে এবং তার পদার্থ, রসায়ন, গণিত বা জীববিজ্ঞানের মতো বিষয় থাকতে হবে। একইভাবে, ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের জন্য ব্যবসায় শিক্ষা শাখা এবং কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের জন্য মানবিক শাখার শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পায়। তবে কিছু ইউনিটে বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। নিচে একটি টেবিলের মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম জিপিএ এবং অন্যান্য শর্তাবলী বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো। আবেদন করার আগে অবশ্যই এই টেবিলটি ভালোভাবে মিলিয়ে নিন।

ইউনিটভিত্তিক আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা

ইউনিটের নাম

এইচএসসি'তে প্রয়োজনীয় বিভাগ

এসএসসি (৪র্থ বিষয় সহ) ন্যূনতম জিপিএ

এইচএসসি (৪র্থ বিষয় সহ) ন্যূনতম জিপিএ

এসএসসি ও এইচএসসি'র মোট জিপিএ (৪র্থ বিষয় সহ)

বিজ্ঞান ইউনিট

বিজ্ঞান

৩.৫০

৩.৫০

৮.০০

কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট

মানবিক/বিজ্ঞান/ব্যবসায় শিক্ষা

৩.০০

৩.০০

৭.৫০

ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট

ব্যবসায় শিক্ষা/বিজ্ঞান/মানবিক

৩.০০

৩.০০

৭.৫০

চারুকলা ইউনিট

যেকোনো বিভাগ

৩.০০

৩.০০

৬.৫০

কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত:

  • বিজ্ঞান ইউনিটের জন্য: উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও জীববিজ্ঞান বিষয়গুলোর মধ্যে অন্তত ৩টি থাকা আবশ্যক।

  • ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের জন্য: উচ্চ মাধ্যমিকে হিসাববিজ্ঞান এবং ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা থাকা আবশ্যক।

  • আইন বিভাগে ভর্তির জন্য: উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা ও ইংরেজিতে নির্দিষ্ট গ্রেড পয়েন্ট প্রয়োজন হতে পারে, যা চূড়ান্ত সার্কুলারে উল্লেখ থাকবে।

  • O-Level এবং A-Level বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য সমতা নিরূপণের মাধ্যমে আবেদনের যোগ্যতা নির্ধারিত হবে।

৩. আবেদন প্রক্রিয়া: ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ গাইডলাইন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক। আবেদন প্রক্রিয়াটি তুলনামূলকভাবে সহজ হলেও তাড়াহুড়ো বা ভুলের কারণে অনেক শিক্ষার্থীর আবেদন বাতিল হয়ে যায়। তাই প্রতিটি ধাপ সতর্কতার সাথে সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি। নিচে আবেদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো, যা অনুসরণ করে আপনি নির্ভুলভাবে আপনার আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন।

১. ওয়েবসাইটে প্রবেশ: প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://admission.eis.du.ac.bd) প্রবেশ করতে হবে।

২. লগইন/রেজিস্ট্রেশন: ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর "আবেদন/লগইন" বাটনে ক্লিক করুন। আপনার উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক পরীক্ষার রোল নম্বর, পাসের সন ও বোর্ডের নাম দিয়ে "দাখিল করুন" বাটনে ক্লিক করুন। আপনার তথ্য সঠিক থাকলে পরবর্তী ধাপে আপনার ব্যক্তিগত ও অ্যাকাডেমিক তথ্য প্রদর্শিত হবে।

৩. ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ: এই ধাপে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য (যেমন: বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল, পিতামাতার তথ্য ইত্যাদি) নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে। আপনার একটি সচল মোবাইল নম্বর প্রদান করা বাধ্যতামূলক, কারণ ভর্তি সংক্রান্ত সকল তথ্য SMS এর মাধ্যমে এই নম্বরেই পাঠানো হবে।

৪. ইউনিট পছন্দ: আপনি যে ইউনিটে পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক, সেই ইউনিটটি নির্বাচন করুন। একজন শিক্ষার্থী একাধিক ইউনিটে আবেদন করার যোগ্যতা রাখলে, প্রতিটি ইউনিটের জন্য আলাদাভাবে ফি প্রদান করে আবেদন করতে পারবে।

৫. ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড: নির্দিষ্ট মাপের একটি রঙিন ছবি (300x300 পিক্সেল) এবং আপনার স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি (300x80 পিক্সেল) আপলোড করতে হবে। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই একরঙা হতে হবে এবং সম্প্রতি তোলা ছবি ব্যবহার করা আবশ্যক। স্বাক্ষরটি অবশ্যই স্পষ্ট হতে হবে।

৬. আবেদন ফি পরিশোধ: সকল তথ্য পূরণ এবং ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড করার পর আবেদন ফি পরিশোধের পালা। আপনি অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং (যেমন: বিকাশ, রকেট) অথবা রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকের যেকোনো শাখায় টাকা জমা দিয়ে ফি পরিশোধ করতে পারবেন। প্রতিটি ইউনিটের জন্য নির্ধারিত ফি আলাদাভাবে পরিশোধ করতে হবে।

৭. পেমেন্ট স্লিপ ডাউনলোড: ফি পরিশোধ সম্পন্ন হলে আপনার প্রোফাইল থেকে পেমেন্ট স্লিপ বা আবেদন ফরমের একটি পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করুন। এটি আপনার আবেদনের প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে।

৮. প্রবেশপত্র ডাউনলোড: আবেদন প্রক্রিয়া শেষে এবং পরীক্ষার নির্দিষ্ট দিনের কিছুদিন পূর্বে ওয়েবসাইট থেকে আপনার প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। প্রবেশপত্র ডাউনলোডের তারিখ SMS এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

৪. ভর্তি পরীক্ষার মানবণ্টন ও পরীক্ষার পদ্ধতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মূলত দুটি অংশ থাকে: বহুনির্বাচনী (MCQ) এবং লিখিত (Written)। প্রতিটি ইউনিটের জন্য বিষয়ভিত্তিক মানবণ্টন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। পরীক্ষার মোট সময় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। এর মধ্যে সাধারণত ৪৫ মিনিট MCQ এবং ৪৫ মিনিট লিখিত পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ থাকে। MCQ অংশে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা হয়, তাই উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

বিজ্ঞান ইউনিট ("ক" ইউনিট): বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ে উত্তর করা বাধ্যতামূলক। চতুর্থ বিষয় হিসেবে গণিত অথবা জীববিজ্ঞানের মধ্যে যেকোনো একটির উত্তর করতে হবে। যারা গণিত ও জীববিজ্ঞান উভয়ের উত্তর করবে, তারা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের বিষয় এবং জীববিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে।

  • মোট নম্বর: ১০০ (MCQ- ৬০, লিখিত- ৪০)

  • বিষয়: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি

  • MCQ অংশ (৬০ নম্বর): পদার্থবিজ্ঞান (১৫), রসায়ন (১৫), গণিত (১৫), জীববিজ্ঞান (১৫)। চারটি বিষয়ের মধ্যে যেকোনো ৩টির উত্তর করতে হবে।

  • লিখিত অংশ (৪০ নম্বর): পদার্থবিজ্ঞান (১০), রসায়ন (১০), গণিত (১০), জীববিজ্ঞান (১০)। চারটি বিষয়ের মধ্যে যেকোনো ৩টির উত্তর করতে হবে।

কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট ("খ" ইউনিট): এই ইউনিটে বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞানের উপর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ জ্ঞান অংশে বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে প্রশ্ন করা হয়।

  • মোট নম্বর: ১০০ (MCQ- ৬০, লিখিত- ৪০)

  • MCQ অংশ (৬০ নম্বর): বাংলা (১৫), ইংরেজি (১৫), সাধারণ জ্ঞান (৩০)।

  • লিখিত অংশ (৪০ নম্বর): বাংলা (২০), ইংরেজি (২০)।

ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট ("গ" ইউনিট): ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য এই ইউনিটে তাদের পঠিত বিষয়গুলোর উপর পরীক্ষা নেওয়া হয়।

  • মোট নম্বর: ১০০ (MCQ- ৬০, লিখিত- ৪০)

  • MCQ অংশ (৬০ নম্বর): বাংলা (১২), ইংরেজি (১২), হিসাববিজ্ঞান (১২), ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা (১২), মার্কেটিং/ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং (১২)।

  • লিখিত অংশ (৪০ নম্বর): মূলত ইংরেজি থেকে অনুবাদ (বাংলা ও ইংরেজি), সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদ লিখন এবং ব্যবসায় সম্পর্কিত বিষয়াবলী থেকে প্রশ্ন থাকে।

চারুকলা ইউনিট ("চ" ইউনিট): এই ইউনিটের পরীক্ষা দুটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশে সাধারণ জ্ঞান এবং দ্বিতীয় অংশে অঙ্কন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

  • মোট নম্বর: ১০০

  • সাধারণ জ্ঞান (MCQ - ৪০ নম্বর): শিল্পকলা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কিত প্রশ্ন থাকে।

  • অঙ্কন (লিখিত - ৬০ নম্বর): আবেদনকারীদের অঙ্কন দক্ষতা যাচাই করা হয়। বিষয়বস্তু পরীক্ষার দিন জানিয়ে দেওয়া হয়।

৫. মেধাস্কোর নির্ধারণ এবং এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএ-এর ভূমিকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় চূড়ান্ত মেধাতালিকা শুধুমাত্র ভর্তি পরীক্ষার নম্বরের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় না। এখানে আপনার মাধ্যমিক (এসএসসি) এবং উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফলেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মোট ১২০ নম্বরের ভিত্তিতে মেধাস্কোর গণনা করা হয়। এর মধ্যে ১০০ নম্বর আসে ভর্তি পরীক্ষা থেকে এবং বাকি ২০ নম্বর আসে আপনার একাডেমিক ফলাফল থেকে।

মেধাস্কোর গণনার পদ্ধতি:

  • ভর্তি পরীক্ষার নম্বর: ১০০ (MCQ ও লিখিত পরীক্ষার প্রাপ্ত মোট নম্বর)

  • একাডেমিক ফলাফল: ২০

    • এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ (৪র্থ বিষয় সহ) × ২ = ১০ (সর্বোচ্চ)

    • এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ (৪র্থ বিষয় সহ) × ২ = ১০ (সর্বোচ্চ)

চূড়ান্ত মেধাস্কোর = (ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর) + (এসএসসি জিপিএ × ২) + (এইচএসসি জিপিএ × ২)

উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ৮০ পায় এবং তার এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ-৫ থাকে, তাহলে তার চূড়ান্ত মেধাস্কোর হবে: ৮০ + (৫ × ২) + (৫ × ২) = ৮০ + ১০ + ১০ = ১০০।

এই পদ্ধতিতে মেধাতালিকা তৈরি করা হয় এবং এর ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীদের বিষয় বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাই, যাদের একাডেমিক ফলাফল ভালো, তারা মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকার ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে। তবে ভর্তি পরীক্ষাই হলো মূল নিয়ামক, কারণ এখানে ১০০ নম্বরের বিশাল ব্যবধান গড়ার সুযোগ থাকে।

৬. ইউনিট পরিচিতি ও আনুমানিক আসন সংখ্যা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি ইউনিটের অধীনে বিভিন্ন অনুষদ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটের অধীনে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় থাকে। আবেদনের পূর্বে কোন ইউনিটের অধীনে আপনার পছন্দের বিষয় রয়েছে, তা জেনে নেওয়া ভালো। নিচে ইউনিট পরিচিতি এবং ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী আনুমানিক আসন সংখ্যা দেওয়া হলো (২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষে আসন সংখ্যা কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে)।

ইউনিটের নাম

অন্তর্ভুক্ত অনুষদ ও ইনস্টিটিউটসমূহ

আনুমানিক মোট আসন সংখ্যা

বিজ্ঞান ইউনিট

বিজ্ঞান অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, ফার্মেসী অনুষদ, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজী অনুষদ, আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদ এবং সংশ্লিষ্ট ইনস্টিটিউটসমূহ।

প্রায় ১,৮৫১ টি

কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট

কলা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, আইন অনুষদ এবং সংশ্লিষ্ট ইনস্টিটিউটসমূহ।

প্রায় ২,৯৩৪ টি

ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট

বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের সকল বিভাগ।

প্রায় ৯৩০ টি

চারুকলা ইউনিট

চারুকলা অনুষদের সকল বিভাগ।

প্রায় ১৩০ টি

বিভাগ পরিবর্তন:

  • বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা 'বিজ্ঞান' ইউনিট ছাড়াও 'কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান', 'ব্যবসায় শিক্ষা', এবং 'চারুকলা' ইউনিটে পরীক্ষা দিতে পারবে।

  • মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা 'কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান' ইউনিট ছাড়াও 'ব্যবসায় শিক্ষা' (নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে) এবং 'চারুকলা' ইউনিটে পরীক্ষা দিতে পারবে।

  • ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা 'ব্যবসায় শিক্ষা' ইউনিট ছাড়াও 'কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান' এবং 'চারুকলা' ইউনিটে পরীক্ষা দিতে পারবে।

৭. পরীক্ষার প্রস্তুতি: ইউনিটভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ কৌশল

সঠিক কৌশল এবং গোছানো প্রস্তুতিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্যের চাবিকাঠি। প্রতিটি ইউনিটের প্রশ্নের ধরন আলাদা হওয়ায় প্রস্তুতি কৌশলও ভিন্ন হওয়া উচিত।

বিজ্ঞান ইউনিটের প্রস্তুতি:

  • মূল বইকে অগ্রাধিকার: উচ্চ মাধ্যমিকের পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও জীববিজ্ঞানের মূল বইগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ুন। প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে থাকা অনুশীলনী সমাধান করুন।

  • সূত্র ও ধারণা: পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের জন্য প্রতিটি সূত্র ভালোভাবে আয়ত্ত করুন এবং সেই সূত্রের প্রায়োগিক ব্যবহার শিখুন। রসায়নে বিক্রিয়া এবং জীববিজ্ঞানে বৈজ্ঞানিক নাম ও পার্থক্যগুলোর উপর জোর দিন।

  • প্রশ্ন ব্যাংক সমাধান: বিগত ১০ বছরের প্রশ্ন ব্যাংক সমাধান করলে প্রশ্নের ধরন ও মানবণ্টন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে।

  • লিখিত অংশের জন্য অনুশীলন: লিখিত অংশের জন্য গাণিতিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বিভিন্ন সংজ্ঞা, পার্থক্য এবং অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর লেখার অনুশীলন করুন।

কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের প্রস্তুতি:

  • বাংলা: নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বইটি ভালোভাবে পড়ুন। উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা প্রথম পত্রের সিলেবাসভুক্ত প্রতিটি গদ্য ও পদ্যের মূলভাব, লেখক পরিচিতি ও শব্দার্থ ভালোভাবে আয়ত্ত করুন।

  • ইংরেজি: Vocabulary, Analogy, Idioms & Phrases, Group Verbs এবং Grammar (Parts of Speech, Tense, Voice, Narration, Preposition) এর উপর জোর দিন। নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা পড়ুন।

  • সাধারণ জ্ঞান: বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর জন্য নিয়মিত পত্রিকা ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ুন। বাংলাদেশ অংশের জন্য ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক অংশের জন্য বিভিন্ন সংস্থা, চুক্তি, পুরস্কার ও খেলাধুলার খবর রাখুন।

ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের প্রস্তুতি:

  • পঠিত বিষয়: হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স ও মার্কেটিং এর মূল বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় ভালোভাবে পড়ুন। প্রতিটি বিষয়ের মৌলিক ধারণাগুলো স্পষ্ট রাখুন।

  • ইংরেজি ও বাংলা: কলা ইউনিটের মতো বাংলা ও ইংরেজির জন্য প্রস্তুতি নিন, কারণ এই দুটি বিষয়ে ভালো নম্বর তোলা আবশ্যক।

  • অনুশীলন: বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধানের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের প্রশ্ন সমাধান করুন।

চারুকলা ইউনিটের প্রস্তুতি:

  • সাধারণ জ্ঞান: শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, স্থাপত্য এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান অর্জন করুন।

  • অঙ্কন: নিয়মিত অঙ্কন অনুশীলন করুন। স্টিল লাইফ, প্রাকৃতিক দৃশ্য, ফিগার ড্রইং ইত্যাদি অনুশীলন করুন। বিভিন্ন মিডিয়াম (পেন্সিল, জলরং) ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করুন।

শেষ কথা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া একটি গৌরবের বিষয়। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য এবং সঠিক দিকনির্দেশনা। আবেদনের তারিখ থেকে শুরু করে পরীক্ষার প্রস্তুতি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে সতর্ক থাকুন। নিজের প্রস্তুতির উপর বিশ্বাস রাখুন এবং শান্ত মাথায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করুন। মনে রাখবেন, আপনার প্রচেষ্টা এবং মেধার সঠিক সমন্বয়ই এনে দেবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। সকল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর জন্য রইল শুভকামনা।

নবীনতর পূর্বতন

ছবি: দ্য ডেইলি পাবলিকিয়ান