রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং অন্যতম সেরা একটি বিদ্যাপীঠ। প্রতি বছর হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী এখানে ভর্তির স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ হলো একটি তীব্র প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা। সম্প্রতি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করেছে, যা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। এই আর্টিকেলটিতে আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল খুঁটিনাটি বিষয়, তারিখ, আবেদনের যোগ্যতা, মানবন্টন, প্রস্তুতি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরব।
Rajshahi University (RU) ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি ও কেন্দ্র
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এবং পরীক্ষা প্রক্রিয়াকে আরও মসৃণ করতে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ, যা সারা দেশ থেকে আগত পরীক্ষার্থীদের জন্য স্বস্তিদায়ক।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের কনফারেন্স কক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপকমিটির সভায় ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার সময়সূচি চূড়ান্ত করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরীক্ষাগুলো আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের তিনটি ভিন্ন তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি ইউনিটের পরীক্ষা দুটি পালায় বা শিফটে বিভক্ত থাকবে, যা বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর সুষ্ঠুভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।
পরীক্ষার কেন্দ্রসমূহ:
রাজশাহী (মূল কেন্দ্র)
ঢাকা
চট্টগ্রাম
খুলনা
রংপুর
বরিশাল
শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো একটি কেন্দ্র পছন্দ করে চূড়ান্ত আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন। তবে মনে রাখতে হবে, কেন্দ্র পছন্দের সুযোগটি চূড়ান্ত আবেদনের সময় দেওয়া হবে এবং আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় 'আগে আবেদন করলে আগে পাবেন' ভিত্তিতে কেন্দ্র নির্ধারিত হতে পারে। তাই দ্রুত আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
Rajshahi University - RU Admission 2025-2026 পরীক্ষার তারিখ ও সময়সূচি তুলে ধরা হলো:
ইউনিটের নাম | বিষয় | পরীক্ষার তারিখ | পরীক্ষার সময় (দুই শিফট) |
সি ইউনিট | বিজ্ঞান | ১৬ জানুয়ারি, ২০২৬ (শুক্রবার) | সকাল ১১:০০ - দুপুর ১২:০০ এবং দুপুর ৩:০০ - বিকেল ৪:০০ |
এ ইউনিট | মানবিক | ১৭ জানুয়ারি, ২০২৬ (শনিবার) | সকাল ১১:০০ - দুপুর ১২:০০ এবং দুপুর ৩:০০ - বিকেল ৪:০০ |
বি ইউনিট | বাণিজ্য ও অবাণিজ্য | ২৪ জানুয়ারি, ২০২৬ (শনিবার) | সকাল ১১:০০ - দুপুর ১২:০০ এবং দুপুর ৩:০০ - বিকেল ৪:০০ |
পরীক্ষার দিন শিক্ষার্থীদের অবশ্যই প্রবেশপত্র এবং উচ্চ মাধ্যমিকের মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে। যানজট ও অন্যান্য অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এড়াতে নির্ধারিত সময়ের অন্তত এক ঘণ্টা আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ইউনিট পরিচিতি ও সম্ভাব্য আসন সংখ্যা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা মূলত তিনটি ইউনিটে বিভক্ত: 'এ' ইউনিট (মানবিক), 'বি' ইউনিট (বাণিজ্য), এবং 'সি' ইউনিট (বিজ্ঞান)। প্রতিটি ইউনিটের অধীনে একাধিক অনুষদ এবং বিভাগ রয়েছে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও আগ্রহ অনুযায়ী সঠিক ইউনিট পছন্দ করতে হয়। নিচে প্রতিটি ইউনিট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
এ ইউনিট (মানবিক):
এই ইউনিটটি মূলত মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য। তবে নির্দিষ্ট কিছু বিভাগে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারেন। 'এ' ইউনিটের অধীনে কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান, এবং চারুকলা অনুষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষদ রয়েছে।
অন্তর্ভুক্ত অনুষদ ও বিভাগসমূহ: বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, আইন, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, লোকপ্রশাসন, নৃবিজ্ঞান, চারুকলা ইত্যাদি।
সম্ভাব্য আসন সংখ্যা: বিগত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, 'এ' ইউনিটে প্রায় ২০০০+ আসন থাকে। চূড়ান্ত আসন সংখ্যা ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হবে।
বি ইউনিট (বাণিজ্য):
এই ইউনিটটি ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রধান হলেও, এখানে অবাণিজ্য শিক্ষার্থীদের জন্যও (বিজ্ঞান ও মানবিক) আবেদনের সুযোগ রয়েছে। 'বি' ইউনিটের অধীনে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ এবং ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (IBA) অন্তর্ভুক্ত।
অন্তর্ভুক্ত বিভাগসমূহ: অ্যাকাউন্টিং ও ইনফরমেশন সিস্টেমস, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, মার্কেটিং, ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স, এবং ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (IBA)।
সম্ভাব্য আসন সংখ্যা: 'বি' ইউনিটে সাধারণত ৫০০-৬০০ আসন থাকে। অবাণিজ্য শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষিত থাকে।
সি ইউনিট (বিজ্ঞান):
বিজ্ঞান শাখা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা শিক্ষার্থীদের জন্য এই ইউনিটটি предназначено। এখানে বিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল, এবং জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের মতো অনুষদগুলো রয়েছে।
অন্তর্ভুক্ত অনুষদ ও বিভাগসমূহ: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, পরিসংখ্যান, ফার্মেসি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE), ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ICE), জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি, কৃষি, ভেটেরিনারি সায়েন্স ইত্যাদি।
সম্ভাব্য আসন সংখ্যা: 'সি' ইউনিট হলো আসন সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় ইউনিট। এখানে প্রায় ২৫০০+ আসন থাকে।
বিগত বছরের পরিসংখ্যান:
গত বছর (২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ইউনিটে মোট আসন ছিল ৪,৩২৩টি। এর বিপরীতে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪১৫ জন শিক্ষার্থী চূড়ান্ত আবেদনের সুযোগ পেয়েছিলেন। অর্থাৎ, প্রতি আসনের জন্য গড়ে প্রায় ৫৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, যা এই পরীক্ষার তীব্রতা নির্দেশ করে।
আবেদনের যোগ্যতা ও প্রক্রিয়া
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। আবেদন প্রক্রিয়া দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়: প্রাথমিক আবেদন এবং চূড়ান্ত আবেদন।
আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা (পূর্ববর্তী বছরের আলোকে):
এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান: শিক্ষার্থীদের অবশ্যই বাংলাদেশের যেকোনো শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
পাসের সাল: সাধারণত ভর্তি পরীক্ষার পূর্ববর্তী দুই বছরের মধ্যে এইচএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। অর্থাৎ, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য যারা ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে এইচএসসি পাশ করেছেন, তারা আবেদন করার যোগ্য হবেন (সেকেন্ড টাইমারদের সুযোগ রয়েছে)।
ন্যূনতম জিপিএ:
এ ইউনিট (মানবিক): এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০ সহ মোট জিপিএ ৭.০০ থাকতে হবে।
বি ইউনিট (বাণিজ্য): এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ সহ মোট জিপিএ ৭.৫০ থাকতে হবে।
সি ইউনিট (বিজ্ঞান): এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ সহ মোট জিপিএ ৮.০০ থাকতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া:
১. প্রাথমিক আবেদন: ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পর নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে (সাধারণত admission.ru.ac.bd) গিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক আবেদন করতে হয়। এই পর্যায়ে একটি নির্দিষ্ট আবেদন ফি (সাধারণত ৫৫-৬০ টাকা) মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
২. প্রাথমিক আবেদন যাচাই-বাছাই: এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিটি ইউনিট থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক (সাধারণত ৭২,০০০) শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত আবেদনের জন্য নির্বাচন করা হয়।
৩. চূড়ান্ত আবেদন: নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা পুনরায় ওয়েবসাইটে লগইন করে বিস্তারিত তথ্য (যেমন ছবি, স্বাক্ষর, কোটা সংক্রান্ত তথ্য, পরীক্ষার কেন্দ্র পছন্দ) পূরণ করেন এবং নির্ধারিত আবেদন ফি (সাধারণত ১১০০-১৩০০ টাকা) পরিশোধ করে চূড়ান্ত আবেদন সম্পন্ন করেন।
৪. প্রবেশপত্র ডাউনলোড: চূড়ান্ত আবেদন সম্পন্ন হওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ওয়েবসাইট থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে হয়। প্রবেশপত্র ছাড়া কোনোভাবেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে না।
ভর্তি পরীক্ষার মানবন্টন ও পদ্ধতি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা মূলত বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ) পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। তবে 'বি' ইউনিটের অধীনে আইবিএ (IBA) এবং 'এ' ইউনিটের অধীনে চারুকলা অনুষদের জন্য লিখিত বা ব্যবহারিক পরীক্ষাও থাকতে পারে।
সাধারণ মানবন্টন:
মোট নম্বর: ১০০
মোট প্রশ্ন: ৮০
প্রতি প্রশ্নের মান: ১.২৫
সময়: ১ ঘণ্টা (৬০ মিনিট)
পাশ নম্বর: ৪০
নেগেটিভ মার্কিং: প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২০ নম্বর কাটা হবে (অর্থাৎ, ৫টি ভুল উত্তরের জন্য ১ নম্বর কাটা যাবে)।
ইউনিটভিত্তিক বিষয় ও মানবন্টন (সম্ভাব্য):
এ ইউনিট (মানবিক):
বাংলা: ২৫টি প্রশ্ন
ইংরেজি: ২৫টি প্রশ্ন
সাধারণ জ্ঞান: ৩০টি প্রশ্ন
মোট: ৮০টি প্রশ্ন
বি ইউনিট (বাণিজ্য ও অবাণিজ্য):
বাণিজ্য শাখার জন্য:
বাংলা: ১০টি প্রশ্ন
ইংরেজি: ১৫টি প্রশ্ন
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা: ২৫টি প্রশ্ন
হিসাববিজ্ঞান: ২৫টি প্রশ্ন
আইসিটি: ৫টি প্রশ্ন
অবাণিজ্য শাখার জন্য:
বাংলা: ২০টি প্রশ্ন
ইংরেজি: ২৫টি প্রশ্ন
সাধারণ জ্ঞান/গণিত: ৩০টি প্রশ্ন
আইসিটি: ৫টি প্রশ্ন
সি ইউনিট (বিজ্ঞান):
এই ইউনিটে আবশ্যিক ও ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়।
আবশ্যিক (সকলের জন্য):
পদার্থবিজ্ঞান: ২৫টি প্রশ্ন
রসায়ন: ২৫টি প্রশ্ন
ঐচ্ছিক (যেকোনো ২টি):
গণিত: ১৫টি প্রশ্ন
জীববিজ্ঞান: ১৫টি প্রশ্ন
গণিত + জীববিজ্ঞান: ১৫টি প্রশ্ন (উভয় বিষয় থেকে প্রশ্ন থাকবে)
শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিকের ঐচ্ছিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ঐচ্ছিক অংশের উত্তর দিতে হয়। প্রকৌশল সংক্রান্ত বিষয় পেতে হলে গণিত এবং জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয় পেতে হলে জীববিজ্ঞান উত্তর করা বাধ্যতামূলক।
মেধাতালিকা ও ফলাফল প্রস্তুতি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত মেধাতালিকা শুধুমাত্র ভর্তি পরীক্ষার নম্বরের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় না। এখানে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের উপরও একটি নির্দিষ্ট নম্বর বরাদ্দ থাকে।
মেধাস্কোর নির্ণয় পদ্ধতি:
ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরের পাশাপাশি এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমান পরীক্ষার জিপিএ-এর উপর ভিত্তি করে আরও ১০০ নম্বর যোগ করে মোট ২০০ নম্বরের উপর মেধাতালিকা প্রস্তুত করা হয়। তবে গত বছর থেকে এই নিয়মে পরিবর্তন এনে শুধুমাত্র ভর্তি পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতেই মেধাতালিকা করা হচ্ছে। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে, তা চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করা হবে। যদি পূর্বের নিয়ম (জিপিএ সহ) বহাল থাকে, তবে পদ্ধতিটি হবে নিম্নরূপ:
ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর: ১০০
এসএসসি জিপিএ-কে নির্দিষ্ট সংখ্যা দ্বারা গুণ: (যেমন, SSC GPA x ৮)
এইচএসসি জিপিএ-কে নির্দিষ্ট সংখ্যা দ্বারা গুণ: (যেমন, HSC GPA x ১২)
মোট মেধাস্কোর: ভর্তি পরীক্ষার নম্বর + (SSC GPA গুণফল) + (HSC GPA গুণফল)
ফলাফল সাধারণত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের রোল নম্বর ব্যবহার করে ফলাফল দেখতে পারেন।
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি: একটি সংক্ষিপ্ত গাইডলাইন
সঠিক পরিকল্পনা এবং কঠোর পরিশ্রমই পারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য এনে দিতে।
মৌলিক বিষয়াবলিতে দক্ষতা: প্রতিটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবইগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করা। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের জন্য পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও জীববিজ্ঞানের মূল বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক।
প্রশ্নব্যাংক সমাধান: বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করলে প্রশ্নের ধরন, মানবন্টন এবং গুরুত্বপূর্ণ টপিক সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যায়। এটি সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
নিয়মিত অনুশীলন: প্রতিদিন রুটিন করে প্রতিটি বিষয় অনুশীলন করতে হবে। মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করে নিজের প্রস্তুতি যাচাই করা এবং ভুলগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো শুধরে নেওয়া জরুরি।
সাধারণ জ্ঞান: 'এ' এবং 'বি' (অবাণিজ্য) ইউনিটের জন্য সাধারণ জ্ঞান একটি বড় অংশ। এর জন্য সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা, এবং তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে।
ইংরেজি ও বাংলা: এই দুটি বিষয়ে ভালো করার জন্য ব্যাকরণ অংশের উপর জোর দিতে হবে এবং সাহিত্য ও শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশাল সুযোগ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার তারিখ আগাম ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীরা এখন থেকেই একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে প্রস্তুতি শুরু করতে পারবেন। তীব্র প্রতিযোগিতা থাকলেও, শৃঙ্খলা, অধ্যাবসায় এবং সঠিক কৌশলের মাধ্যমে এই পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। ভর্তিচ্ছু সকল শিক্ষার্থীর জন্য রইল শুভকামনা।